‘রোজা’

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মাস কোনটি যদি প্রশ্ন করা হয়, যেকোন মুসলিমই একই উত্তর দেবেন। রামাদান। যে ব্যক্তির ইসলাম সম্পর্কে সামান্যতম ধারণা আছে, তিনিও বলতে পারেন এই মাস পবিত্র। এই মাস ফযিলতের।

কিন্তু তবুও কিছু একটা জানি আমাদের বেঁধে রাখছে এই মাসের ফযিলত থেকে। কিছু একটা আমাদের আমাদের ছুটতে দিচ্ছে না এই মাসের অসীম রহমত সুধা পানের দিকে। কি সেটা?

আমাদের সদিচ্ছার অভাব। আমাদের মূর্খতা। আমাদের নির্বুদ্ধিতা। আমাদের ঔদাসীন্য।

আমরা যদি আমাদের নিজেদের বিচার করি, তবে হয়তো কিছুটা উত্তর পাওয়া যেতে পারে। সাধারণত আমরা রামাদান মাসকে অন্যান্য মাস থেকে পৃথক করি, কারণ এই মাসে রোযা রাখতে হয়। এই মাসে সাহরী করতে হয়, ইফতার করতে হয়, তারাবী পড়তে হয়। ব্যাস। হয়ে গেল পৃথকীকরণ।
অথচ আমরা কি মূর্খতার সাথেই না এই মাসের গুরুত্বকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছি! আল্লাহ্‌ তা’লা কুরআনুল কারীমে বারংবার রামাদানের গুরুত্তের কথা শুনিয়েছেন। রাসুলাল্লাহ (সঃ) তার জীবদ্দশায় অসংখ্যবার রামাদানের ফযিলতের কথা বর্ণনা করেছেন। এটাকি শুধুই রোজা রাখা আর তারাবী পড়ার মাস?

নাহ! এটা সেই মাস, যে মাসে পবিত্র কুরআন এ পৃথিবীতে নাযিল হয়। এটা সেই মাস, যে মাসে আল্লাহ্‌র পূর্ববর্তী কিতাবসমূহ ও নাযিল হয়। এটা সেই মাস, যে মাসে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় আর জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। এটা সেই মাস যে মাসে শয়তানকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। এটা সেই মাস যে মাসের প্রতিটা মুহূর্তই দুয়া কবুলের আর গুনাহ মাফের মুহূর্ত। এটা সেই মাস যে মাসের ৩০ দিনের ট্রেনিং এ কারো জীবন বদলে যেতে বাধ্য। আমরা এই রোজার ফযিলত কতটা তা কি আমরা আঁচ করতে পারি? কি বলেন আল্লাহ্‌ এই মাস সম্পর্কে?

“রোজা আমার জন্যে আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।”

এটা সেই মাস। এটা সেই বরকতময় মাস। কিন্তু আমরা কি করছি? আমরা সবাই মুখে উপরের কথাগুলো বলছি। অন্তর দিয়ে অনুভব করছিনা। সাহরী খেয়ে দিনভর রোজা রাখছি, তবু সেই রোজার সম্মান সম্পর্কে অবহিত হচ্ছি না। আমরা রোজা রেখে মিথ্যা বলছি, রোজা রেখে অনৈসলামিক দৃশ্য দেখছি, অনৈসলামিক কথা শুনছি, কানে হেডফোন লাগিয়ে মিউসিক শুনছি, গায়ের মাহরামের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছি!

রোজা কি শুধু পেটের? রোজা সমগ্র দেহের। জিহ্বার, কানের, চোখের, হাতের, পায়ের, যৌনাঙ্গের, মস্তিষ্কের, সর্বোপরি অন্তরের। একটু ভেবে দেখুন তো, আমরা কি অন্তর দিয়ে রোজা রাখছি? আমরা কি সত্যিই তাকওয়া অর্জনের জন্যে দিনভর উপোস থাকছি? নাকি রোজা রাখতে হয় বলেই রাখছি?

আসুন আমাদের সালাতে চোখ দিই। আমরা কয়জন এ মাসে সালাতের গুরুত্ব বুঝে সালাত আদায় করছি? অথবা কয়জনই বা সালাত আদায় করছি? অথচ এটা সেই অসম্ভব রহমের মাস যে মাসের এক নফল ইবাদত অন্য মাসের ফরয ইবাদতের সমান! আর এক ফরজ ইবাদত অন্য মাসের ৭০ ফরজ ইবাদতের সমান! আপনি কি এটা বুঝে সালাত পড়ছেন?

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম রাত্রী এই মাসেই আসে। লাইলাতুল ক্বাদর। যে রাত্রি হাজার মাসের চাইতে উত্তম। যেই রাত রামাদানের শেষ দশ রাতে অবস্থিত। আমরা কি কখনো তা সন্ধান করেছি? নাকি কারো ফতোয়া শুনে ২৭ রোজার রাতে কাঁধে জায়নামাজ নিয়ে মসজিদে দৌড়েছি? আমরা কি আসলেই এই রাতের ফযিলত সম্পর্কে সচেতন? আসলেই?

রাসুল্লাল্লাহ (সঃ) বারবার শিক্ষা দিয়েছেনএই মাস রাত্রি জাগরণের মাস। এই মাস কিয়াম করার মাস। আমরা কি একবারও এই শিক্ষার মর্ম বুঝেছি? নাকি শুধু তারাবী ৮ রাকাত না ২০ রাকাত এর তর্কেই মাস কাবার করে দিয়েছি? আমরা কি একবারও রাতে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঘুম থেকে উঠে নামাযে দাঁড়িয়েছি? সিরিয়াসলি, আমরা কি আসলেই এই মাসকে বুঝতে পেরেছি?

প্রতিটি নেক কাজের বিনিময় ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন আল্লাহ্‌। কিন্তু রামাদানের রোযার বিনিময় এর গুণন সংখ্যা সীমা-সংখ্যহীন। এই মাসের ইবাদতের কেন এত ফযিলত? কেন এত ফেরত? কেন রাসুলাল্লাহ (সঃ) বলছেন রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ্‌র কাছে মেশকের গন্ধের চেয়েও উৎকৃষ্ট? কেন? আমরা কি কখনো প্রশ্ন করেছি নিজেদের?

রাসূলাল্লাহ (সঃ) বলেছেন

ঐ ব্যক্তি হতভাগা, যে ব্যক্তি মাহে রামাদান পেল অথচ তার জীবনের গুনাহ মাফ করাতে পারলো না।

নিতান্তই হতভাগা না হলে এই মাসের ফযিলত থেকে কেউই বঞ্চিত হয়না। কেউ না। এটা কত বড় একটা সুযোগ এটা বুঝতে মহাজ্ঞানী হতে হয়না। একটু অন্তর দিয়ে অনুধাবনের প্রয়োজন শুধু।
রাসুলাল্লাহ (সঃ) আরো বলেছেন যে ব্যক্তি রোযা রাখার পরেও মিথ্যা বলা ও খারাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকে না তার পানাহার ত্যাগ করায় আল্লাহ্‌র কোন প্রয়োজন নেই।
ভেবে দেখুন এমন একটা মাস, যে মাসের রহমত থেকে কেউ বঞ্চিত হয়না, সেই মাসের প্রধান ইবাদত রোজা, অথচ সামান্য হেলায় তা আল্লাহ্‌ ডাস্টবিনে ফেলে দিতে পারেন!!

তাই আসুন আমরা রামাদানের সঠিক মর্যাদা দেয়া শিখি, এ মাসের সর্বোচ্চ ব্যাবহার নিশ্চিত করতে শিখি, নিজেদের গুনাহ মাফ করতে শিখি। আসুন আমরা এই মাসকে “পবিত্র মাস” বলেই দায়িত্ব খালাস না করে মাসটিকে সুযোগের মাস হিসেবে দেখি। নিজেদের অসীম পাপের বোঝা হাল্কা করার শর্টকাট পথ হিসেবে দেখি। দিনভর উপোস থেকে, যাচ্ছেতাই করে বেড়িয়ে রাতের বেলা তারাবী “পড়ার জন্য পড়া” হিসেবে বিবেচনা না করে এই মাসের প্রতিটা মুহূর্তকে আল্লাহ্‌র দাসত্বে লাগাই। নিজদের তাকওয়া বাড়াই। ইনশা আল্লাহ্‌ পরবর্তী সকল মাসেই আল্লাহ্‌ আমাদের হিদায়াতের রাস্তা দেখাবেন।

আল্লাহ্‌ সর্বজ্ঞানী

By asadapon2014 Posted in ,

Leave a comment